কক্সবাজারে এখন প্রয়োজন শরণার্থী ও উন্নয়নকে সংযুক্ত করে একটি মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা

0

১২ মে ২০১৮, কক্সবাজার: আজ কক্সবাজারে ইউনি রিসোর্ট হোটেলের হলরুমে আইএসসিজি ও সিসিএনএফ যৌথভাবে আয়োজিত “রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য যৌথ সাড়াপ্রদান পরিকল্পনা (জেআরপি ২০১৮)” বিষয়ে একটি তথ্য বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) জনাব মো. মাহিদুর রহমান এবং প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম। সভায় যৌথ সাড়াপ্রদান পরিকল্পনা ২০১৮ বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইএসসিজি-র বারস মারগো এবং রোনডা গোসেন। আইএসসিজি-র উর্ধ্বতন সমন্বয়কারী মিস সুমবুল রিজভী সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

মোহাম্মদ আবুল কালাম দু’জনেই রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তাসহ কক্সবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি মধ্য মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। মানবিক সাড়া প্রদান আরো কার্যকর ও যথাযথ করার জন্য তার এ বক্তব্যের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন আইএসসিজি-র মিস সুমবুল রিজভী।

জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “এই সমস্যা বাংলাদেশের সৃষ্টি নয়। যতদিন পর্যন্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকেরা তাদের গৃহে ফিরে না যায়, ততদিন পর্যন্ত আমরা তাদের অভিভাবক মাত্র। শরণার্থী আর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো সীমানা না থাকায় তাদের মধ্যে দিন দিন দ্বন্দ্ব বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে যেসব অবকাঠামো মাত্র ২ হাজার মানুষের সেবার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোকে এখন ২০ হাজার মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া সেখানে জীবিকা আর নিরাপত্তার বিষয়গুলোও রয়েছে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেবার জন্য যৌথ সাড়াপ্রদান পরিকল্পনা (জেআরপি) বাস্তবায়নেন যে তহবিলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে তার এক-চতুর্থাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর(৩৩৬,০০০ মানুষ) জন্য।

মিস সুমবুল রিজভী বলেন, “মায়ানমার থেকে বিতাড়িত নাগরিকদের আশ্রয় প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ। যৌথ সাড়া প্রদান পরিকল্পনার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা। আর এর সফল বাস্তবায়নের জন্য দরকার দাতা সংস্থাসমূহের সময়োপযোগী সহায়তা ও সমন্বিত সামাজিক সম্প্রীতি কর্মসূচি।”

সভার আলোচকবৃন্দ জেআরপিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টির প্রশংসা করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ইতিমধ্যে১০টি সেক্টরের অধীনে ১০১টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। সেক্টরগুলো হচ্ছে শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, ওয়াশ ও অন্যান্য। ইতিমধ্যে ২৮,৯৪৪ পরিবার জীবিকা সেবা পাচ্ছে, ৭,৭০০ পরিবার/ ব্যক্তি এবং ৫০০ কৃষক কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, ২৫,০০০ মানুষ ক্ষুদ্র বাগান করার জন্য সহায়তা পেয়েছেন এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মাধ্য ৮ টন ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে।

পরিবেশ হচ্ছে একটি জরুরি খাত যেখানে অনেক কাজ করতে হবে। শরণার্থীরা যেখানে সম্ভব আশ্রয় গ্রহন করেছে এবং এতে স্থানীয় বনভ’মির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড়ের ঢালের জমি ক্ষয়রোধ করার জন্য ৯টি ঘাস উৎপাদনের নার্সারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বন বিভাগের সাথে বেশ কিছু এজেন্সি কাজ করছে ভূমির স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য জুন-জুলাইতে ১৪টি স্থানে চাড়া উৎপাদন চলছে।

বর্ষা মৌসুমের প্রস্তুতির জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ৪০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে, ঘুর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ২০টি সরকারী ভবন যাচাই করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। বর্ষায় প্লাবন ও বন্যা এড়াতে পানির মূল প্রবাহগুলো ড্রেজিং করা হয়েছে।

জনাব আবুল কালাম শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর জোর দেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ব্যক্তি ও কমুনিটি পর্যায়ে ক্ষতি নিরূপণ, ত্রাণ ও সহায়তা সরবরাহে সাম্যতা বিধান এবং পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অংশগ্রহনমূলক পদ্ধতি নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ের উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, “জেআরপি’র জন্য দাবি করা তহবিলের সংকট খুবই হতাশাজনক। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানাই এই বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে। অন্যথায় বাংলাদেশের জন্য একা এই সহায়তা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।”

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ড. আব্দুস সালাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব আলী কবির এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব চাইলাও মারমা। সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সিসিএনএফ-এর দুই কো-চেয়ার জনাব আবু মুরশেদ চৌধুরী ও রেজাউল করিম চৌধুরী। আইওএম-এর সংযুক্ত সাহানী ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মি. ডেভিড বক্তব্য রাখেন। উখিয়া ও টেকনাফের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব জাফর আহমেদ, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব নুর আহমেদ আনোয়ারী, পালংখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোজাফফর আহমেদ, রাজাপালং ইউনিয়নের মহিলা সদস্য মর্জিনা বেগম, টেকনাফ উপজেলার প্যানেল চেয়ারম্যান তাহেরা আখতার মিলি প্রমুখ। দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে সভায় মতামত প্রকাশ করেন সুইডিশ দূতাবাস, ইকো, জাইকা এবং ইউএসএইড। সভায় বিশেষ করে সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, আইএসসিজি-র বিভিন্ন সেক্টর সমন্বয়কারী, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় এনজিও-র প্রতিনিধিবৃন্দসহ প্রায় একশত জন অংশগ্রহন করেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে জনাব মো. মাহিদুর রহমান বলেন, আমরা সবাই মিলে কত দ্রুত এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব সেটিই হলো চূড়ান্ত বিষয়। এর জন্য সকল পক্ষকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে।
Please Download [Bangla Press] [English Press]
Photos

   
   
   
 

Newslink

   
   
   
   
Social Sharing

Leave A Reply

  • Latest Meeting Minutes

    • Monthly Coordination Meeting of CCNF: Date 26 December 2020. [English] [Bangla]
    • Minutes of DC office NGO coordination meeting for the month of October 2019.[Download Minutes]
    • Minutes on Monthly Coordination Meeting of CCNF March 2019. Date: 10th March, 2019 Venue: PHALS Sub Office, Bajarghata, Cox’s Bazar [Bangla Minutes] [English Minutes]
    • Minutes of DC office NGO coordination meeting for the month of January 2019. [Meeting Minutes]
    • Monthly Coordination Meeting of CCNF: Date: 01 November 2018, Place: PHALS sub Office Meeting Room [English] [Bangla]
  • NEWS AND VIEWS OF NATIONAL MEDIA

  • News and Views of Cox’s Bazar Media

  • Visitors around the world

  • © Cox's Bazar CSO NGO Forum - 2017 || Develop by COAST ICT Division