রোহিঙ্গা ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা; একক কর্তৃপক্ষের ভিত্তিতে একটি নীতিমালার দাবি

0

কক্সবাজার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। আজ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং একটি একক কর্তৃপক্ষের দাবি করেছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। কক্সবাজার প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় এনজিও ও সুশীল সমাজের এই নেটওয়ার্ক জেআরপিতে সরকারের খরচ ও প্রত্যাবাসনের বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি জানায়। অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য এই পর্যন্ত প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৪৪১ ডলার বা প্রায় ৩৭ হাজার টাকা এসেছে, এই অর্থের কত অংশ প্রত্যক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য, কত অংশ পরিচালনা খাতে আর কত অংশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে ব্যয় হয়েছে তাঁর স্বচ্ছতাও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সিসিএনএফ’র কো-চেয়ার এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন সংস্থাটির কো-চেয়ার এবং পালস’র নির্বাহী পরিচালক আবু মোরশেদ চৌধুরী, আরেকজন কে-চেয়ার এবং মুক্তি কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক বিমল চন্দ্র দে সরকার, হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এবং এনজিও প্ল্যাটফরমের কো-চেয়ার আবুল কাশেম।
আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা পরিকল্পনা বা জেআরপিতে শান্তি বিনির্মাণ, পরিবেশ পুনরুদ্ধার, কিশোর-কিশোরী ও যুব সমাজ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে আলাদা সেক্টর হিসেবে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত সমস্ত প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে মোট বাজেটের ২৫% স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়, তাছাড়া শিবিরগুলিতে প্লাস্টিকের ব্যবহারে অনতিবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। তিনি আরও বলেন, পরিবার পরিকল্পনার বিষয়গুলি স্বাস্থ্য খাতের সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমন্বিত করতে হবে। স্থানীয়করণ টাস্ক ফোর্স (এলটিএফ) সুপারিশগুলি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা জেআরপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি করেন তিনি। জেআরপি- তে সরকারের পরিচালন ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি এটিকে একটি লাইভ ডকুমেন্ট বা জীবন্ত দলিল হিসেবে বিবেচনা করার দাবি করে তিনি বলেন, এটি করা গেলে অত্যন্ত গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই দলিলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে।
বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গা ত্রাণ ব্যবস্থাপনাটিকে একটি একক কর্তৃপক্ষের আওতায় পরিচালিত হওয়ার স্বার্থে আরআরআরসি কার্যালয়ের সঙ্গে আইএসসিজি-কে একীভূত করতে হবে। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসা প্রয়োজন এবং এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় এনজিও / সিএসওদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। বর্তমান বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, রোহিঙ্গা সংকট একটি দীর্ঘায়িত সংকট হতে চলেছে, সুতরাং প্রত্যাবাসনকে অবশ্যই প্রাধান্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলাতেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকার সম্প্রতি কক্সবাজার জেলাকে ব্যয়বহুল এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে, এই ঘোষণা সরকারি কর্মকর্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। তবে জেলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান সংকট এবং সমস্যা বিবেচনা করে তাঁদের জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রদানের সরকারি সিদ্ধান্তের আমরা প্রশংসা করি। শিবিরে সহজে স্থাপনযোগ্য দোতলা ঘর এবং রোহিঙ্গা পরিবারগুলির জন্য ক্যাম্পের ভিতরে জীবিকা নির্বাহের কার্যক্রম করার সুযোগ করে দিতে পারলে, ভবিষ্যতে অর্থ সহায়তা কমে গেলেও তাঁরা টিকে থাকতে পারবে।
আবুল কাশেম বলেন, ইউএন এজেন্সি এবং আইএনজিওগুলির অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, পক্ষপাতমুক্ত রাখতে এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি নীতিমালা থাকতে হবে। ইউএন এজেন্সি এবং আইএনজিওগুলোকে কক্সবাজারে বিভিন্ন কর্মসূচি তদারকি এবং প্রযুক্তিগত/দক্ষতা বিষয়ক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, মাঠ পর্যায়ের সমস্ত কার্যক্রম স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকারকে দিতে হবে। রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসুচিেেত কর্মরত কর্মীদের মধ্যে বেতন বিদ্যমান বাংলাদেশি এনজিও বেতন কাঠামো থেকে ২৬৭% বেড়ে গেছে, যা যুক্তিসঙ্গত নয় । এটি সংশোধন করতে হবে এবং একটি সাধারণ বেতন কাঠামো এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত যাতে ন্যূনতম অর্থ সহায়তা থাকলেও সমস্যা না হয়। সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিবর্তে সক্ষমতা বিনিময়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচিতে জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিৎ। আইএসসিজি’র বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃত্বে স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং কক্সবাজারে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সফরের সময় স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি থাকা খুব প্রয়োজন, যাতে স্থানীয়রা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছে স্থানীয় সমস্যা ও চাহিদাগুলো তুলে ধরতে পারেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে আসা গ্র্যান্ড বার্গেইন মিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কক্সবাজারে আইএসসিজি’র কার্যক্রমে বাংলা ভাষার প্রচলন করা সময়ের দাবি। কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের সকল অঙ্গ সংস্থা এবং আইএনজিগুলোর উচিৎ গ্রান্ড বারগেন, চার্টার ফর চেঞ্জ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক দলিলগুলোর প্রতি যথাযথ সম্মান করা উচিৎ।
Download Position paper [English]
News clip

Social Sharing

Comments are closed.

  • Latest Meeting Minutes

    • Monthly Coordination Meeting of CCNF: Date 26 December 2020. [English] [Bangla]
    • Minutes of DC office NGO coordination meeting for the month of October 2019.[Download Minutes]
    • Minutes on Monthly Coordination Meeting of CCNF March 2019. Date: 10th March, 2019 Venue: PHALS Sub Office, Bajarghata, Cox’s Bazar [Bangla Minutes] [English Minutes]
    • Minutes of DC office NGO coordination meeting for the month of January 2019. [Meeting Minutes]
    • Monthly Coordination Meeting of CCNF: Date: 01 November 2018, Place: PHALS sub Office Meeting Room [English] [Bangla]
  • NEWS AND VIEWS OF NATIONAL MEDIA

  • News and Views of Cox’s Bazar Media

  • Visitors around the world

  • © Cox's Bazar CSO NGO Forum - 2017 || Develop by COAST ICT Division