আগামীকে নিয়ে ভাবনার সময় এখনই- জেআরপি-২০২১ বাস্তবায়ন ও রোহিঙ্গা রেসপন্স এ চাই গণতান্ত্রিক চর্চা ও সমান অংশীদারিত্ব: এসইজি (Strategic Executive Group) কে সিসিএনএফ এর চিঠি।

0

প্রিয় মিয়া, জর্জ এবং জোহানেস,

(১) যে সকল স্থানীয় ও জাতীয় এনজিও রোহিঙ্গা রেসপন্স এ কাজ করছে তাদের পক্ষ থেকে তোলা গত ১৮ এপ্রিল সভায় আমার প্রশ্নের (নিচে যুক্ত করা হয়েছে) উত্তর দেবার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমি এবং জনাব আবু মোরশেদ চৌধুরী আইএসসিজি কর্তৃক পরিচালিত একটি উম্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হয়েছিলাম। আপনারা বলেছেন যে, লোকালাইজেশন টাস্কফোর্স রিপোর্টটি এখনও আলোচনার টেবিলেই রয়েছে। তখন আমি বলেছি যে, এটি তাহলে অবশ্যই একটি ক্রসকাটিং স্ট্রাটেজিক অবজেকটিভস ((strategic objectives) হিসেবে জেআরপি (JRP)-২০২১ তে উল্লিখিত থাকতে হবে।

আমরা মনে করি যে, লোকালাইজেশন টাস্কফোর্স রিপোর্টটি ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি (ক) শুধু অপর্যাপ্ত তহবিল সহায়তা (ধরফ) এর সাথে খাপ খাওয়ানো নয় বরং (খ) প্রযুক্তি সুবিধা এবং এর ব্যবহার জ্ঞান স্থানীয় এনজিও/সিএসও-দের প্রদান করা এবং (গ) স্থানীয় সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে সামগ্রিক সামাজিক এপ্রোচ (whole of society approach) এর মাধ্যমে মানবিক কর্মকান্ডগুলোর বাস্তবায়ন করা, যেখানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো শুধু মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা (technical assistance) প্রদানের মতো কাজগুলোতে যুক্ত থাকবে।

(২) আমরা গত ১ ফেব্রæয়ারি খসড়া জেআরপি-২০২১ এর উপর আমাদের আনুষ্ঠানিক মতামত প্রদান করেছি। আপনারা চাইলে ২ পাতার এই ডকুমেন্টটি এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আমাদের বোঝাপড়া থেকে আমরা এই মতামত প্রদানের ডকুমেন্টটির নাম দিয়েছি “জেআরপি ২০২১: এটা কি সীমানার বাইরে চলে যাওয়া অথবা গতানুগতিক কর্মকান্ড (“JRP 2021 : Is it Going Beyond or Business As Usual“)। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি যে, জেআরপি-২০২১ এর খসড়া হালকা প্রতিবেদনে (draft light version) আমাদের মতামতগুলোর তেমন কিছু প্রতিফলন নেই। আইএসসিজি (ISCG) কে অবশ্যই সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ।

(৩) আমরা গত ১৫ এপ্রিলের চিঠিতে একই ধরণের অনুরোধ করেছিলাম। লোকালাইজেশন টাস্কফোর্স এবং তাদের প্রস্তুতকৃত রোহিঙ্গা কর্মকান্ড বাস্তবায়নে স্থানীয়করণ (localization) রোডম্যাপ রিপোর্ট তৈরির কাজটি ছিল প্রায় ৩০ মাসের এক কষ্টসাধ্য কাজ। শুধু আমরাই নয়, ইউএনডিপি (UNDP) ও আইএফআরসি (IFRC) এর নেতৃত্বে লোকালাইজেশন টাস্কফোর্সের মধ্যে ছিলো ইউএনএইচসিআর (UNHCR), ইউএনআরসিও (UNRCO), অক্সফ্যাম (Oxfam) সেভ দ্য চিলড্রেন (Save The Children) ইউকে এইড/এফসিডিও (UKAID/FCDO), ইইউ (EU) এবং বেশ কয়েকজন দেশিয় নামকরা স্বাধীন বিশেষজ্ঞ (consultant) (যেমন, শিরীন হক, আব্দুল লতিফ খান, ইত্যাদি) এতে যুক্ত ছিলেন। সর্বপরি প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিশ বিভাগের ব্যারিস্টার মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে তার দল মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কাজ করেছে। আমরা আপনাদেরকে অনেক ডলার খরচ করার মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে অনুরোধ করছি। এটি আরো আগেই প্রকাশ হবার কথা ছিল। আপনাদেরকে বুঝতে হবে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশে যতই দেরি করা হবে ততই আপনাদের সাথে আমাদের বিশ্বাসের সম্পর্কে চিড় ধরবে।

(৪) আমি আপনাদেরকে সর্বশেষ জেআরপি-২০২১ এর ৮ নং পাতার দ্বিতীয় প্যারায় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখানে বলা হয়েছে “অধিকন্তু, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা রেসপন্স এনজিও প্লাটফমর্টি হলো একটি স্বাধীন প্লাটফর্ম যেখানে শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে। এই প্লাটফর্মের সমন্বয়কারী পুরোপুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও এজেন্ডা তৈরিতে এর সাথে যুক্ত অন্যান্যদের সাথে সর্বস্তরে সমন্বয় সাধন করছেন”। এই ধরণের বক্তব্য হলো উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া এবং আইএসসিজি’র পুনরাবৃত্তি যেখানে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলো যেমন সিসিএনএফ (www.cxb-cso-ngo.org), যারা শুধু রোহিঙ্গা রেসপন্স নয় বরং কক্সবাজারের প্রায় সমস্ত ইস্যুতে কাজ করে তাদেরকে এক ধরণের খাট করে দেখানো হয়েছে এবং কর্মকান্ড বাস্তবায়নের বিষয়টিকে নিজেদের দিকে টেনে নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও আমরা এনজিও প্লাটফর্মে গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি নিয়ে বার বার কথা তুলেছি। যেমন (ক) এটি খুব কমই গণতান্ত্রিক নিয়ম-শৃংখলা দ্বারা পরিচালিত হয়, যেমন গত ৬ মাসে এই প্লাটফর্মের কোন সভা না হওয়া এবং (খ) গত ৪ বছরে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে না পারা। গত ৪ বছরে আমরা দেখেছি যে হেড অব সাব অফিসেস গ্রæপ (HoSoG) এবং আইএসসিজি বিদেশিদের নেতৃত্বে এনজিও প্লাটফর্ম চালিত করেছে। এর ফলে এনজিও, বিশেষ করে স্থানীয় এনজিওদের সরাসরি অংশগ্রহণ এতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আবারও আপিল জানাতে চাই যে, সকল এনজিও, এমনকি স্থানীয় এনজিওদেরও আইএসসিজি ও হেড অব সাব অফিসেস গ্রæপ এ বাইরের কোন সহায়তা ছাড়াই প্রতিনিধিত্ব করার মতো যথেষ্ট দক্ষতা রাখে। এই সেক্টরে অংশগ্রহণ এবং নিরাপদ আলোচনার জন্য তথাকথিত যথাযথ ক্ষেত্র বিঘিœত হবে বলাটা- এক্ষেত্রে কোন ধরণের অযুহাত হতে পারে না। আইএসসিজি ও হেড অব সাব অফিসেস গ্রæপের বিদেশিদেরকে অবশ্যই সহনশীলতা ও তীর্যক সমালোচনা গ্রহণের মন-মানসিকতা রাখতে হবে।

রোহিঙ্গা কর্মকান্ড বাস্তবায়নে আমাদেরকে একক একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে যা শধুমাত্র গণতান্ত্রিক মালিকানার চর্চার মাধ্যমেই সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বিনীত,

রেজা।

নোট: আমি গত ১৮ এপ্রিলের সভায় যে প্রশ্নগুলো তুলেছিলাম সেগুলো নি¤œরুপ:

১. আমি যেহেতু স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওদেরকে প্রতিনিধিত্ব করি, আমরা গত ১ ফেব্রæয়ারি, ২০২১ খসড়া জেআরপি-২০২১ এর উপর আমাদের মতামত প্রদান করেছি। কিন্তু আমাদের মতামতের তেমন কোন প্রতিফলন আমরা দেখতেই পাচ্ছি না। আমরা ১২টি বিষয় উত্থাপন করেছিলাম, সেখানে এগুলো কে করবে তার চাইতে কিভাবে করা হবে তার উপর আমরা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি।

২. তহবিল সহায়তা (aid) দিন দিন কমে যাবে, দুঃচিন্তা ও সংঘাত বাড়বে। তাই অবসম্ভাবিভাবে আমাদের অবস্থান হলো স্থানীয়করণের (localization) দিকে, যেটি কি না স্থানীয়করণ টাস্ক ফোর্স কর্তৃক প্রস্তুতকৃত। আমাদের দেয়া মতামতগুলোর তেমন কিছুই এই জেআরপিতে উল্লেখ নাই। আমরা হতাশ হয়েছি এটা দেখে যে আমাদের ইস্যুগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

৩. আগামীতে অনেক ইস্যু আসবে যেগুলোর সমাধানের জন্য সরকারের সাথে দেন-দরবার করতে হবে। সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখার জন্য দরকার হবে সামাজিক মবিলাইজেশন করার। শুধু আইএসসিজি (ISCG) ও জাতিসংঘ এ্যাডভোকেসি করলেই হবে না, স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের দ্বারা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়েও এ্যাডভোকেসি ও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। [Download Letter]

Social Sharing

Comments are closed.