কক্সবাজার সদরে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বক্তারা: বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করাই এখনকার দায়িত্ব

0

বাংলাদেশর মানুষ সংবেদনশীল, উদ্বাস্তুদেরকে আমরা অবশ্যই মানবিকতার দৃষ্টিতেই দেখবো। গতকাল বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় কক্সবাজার জেলা পরিষদ হলে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে অতিরিক্তি সচিব এবং ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এ কথা বলেন। গতকাল কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও-ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত কক্সবাজার জেলা পরিষদ হলে বিশ্ব শরাণার্থী দিবস ২০১৮ উপলক্ষে ”বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক মর্যাদা” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিএসও-এনজিও-ফোরাম-এর কো-চেয়ার ও পালস কক্সবাজার-এর চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী।

কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের সদস্য-সচিব মকবুল আহমদের সঞ্চালনায় পরিচালিত সভায় প্রথমে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কোস্ট ট্রাস্ট-এর পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক। তিনি মায়নমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যারা এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে সিসিএনএফ ও কোস্ট ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান। সিসিএনএফ-এর সদস্য সচিব মকবুল আহমেদ সভার সূচনা বক্তৃতায় বলেন, ইতিহাসের নানা পর্বে সামরিক জান্তা ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের নির্যাতনে জনগণ যেভাবে নির্যাতিত হন এবং বাস্তুচ্যুত হন তা নান সময়ে নানাস্থানে ঘটে চলেছে। বাঙালিদেরকেও ১৯৭১ সালে এক কোটি লোককে শরণার্থী হতে হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে অনেক বাঙ্গালিকেও আরাকানের রোহিঙ্গাদের বাড়িতে বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, তা যেন আমরা ভুলে না যাই।

প্রধান অতিথির ভাষণ প্রদানকালে ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক মর্যাদা’ শীরোনামে কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও-ফোরাম যে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কোস্ট সিসিএনএফকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ইতিবাচক করণীয় বিষয়ে আরো অনেক সভার আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিশ্বে উদ্বাস্তু হওয়ার বিষয়টি রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ লোক বিশ্বে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে বাস্তুচ্যুতদের অবস্থানের ফলে জনসংখ্যা ও ভূমির উপর, অবকাঠামোর উপর একটা বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে একটা মানবিক সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, সর্বপ্রথমে যখন সরকার বা এনজিও-রা প্রস্তুত হয় নি তখন স্থানীয় জনগণ নিজেদের যা আছে তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছেন, প্রাণে বাঁচিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, গত দশমাস যাবত উদ্বাস্তুদেরকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ, এনজিও, আইএনজিও, ইউ এন এজেন্সিসমূহ সকলে মিলে পরস্পরের সহযোগী ও সহযাত্রী হিসেবে যে কাজ করে যাচ্ছেন সেই বহুধা বিভক্ত কার্যক্রমে আমি শুধু শৃংখলা বজায় রাখার এবং সরকারী নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা যেন বজায় থাকে সেটাই দেখছি, আসল কাজ করছেন আপনারা। মো: আবুল কালাম বলেন, উদ্বাস্তুদেরকে অবশ্যই আমরা মানবিকতার দৃষ্টিতেই দেখবো; কারণ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী গত বছর উখিয়ায় এসে সেকথাই বলে গেছেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা মতে যতদিন মায়ানমারের উদ্বাস্তু নাগরিকরা নিরাপত্তার সাথে ফেরত না যাচ্ছেন ততদিন মানবিক মর্যাদার সাথেই আমরা তাদের সাথে আচরণ করবো। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু সরকার করবে। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে যে অতৃপ্তিবোধের সৃষ্টি হয়েছে তা নরসনের জন্য জিআরপি-তে মোট বাজেটের এক চতুর্থাংশ রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো সংকট শুধু ক্ষতি সৃষ্টি করে না, অনেকসময় সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দেয়। তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান যেন তাঁর কাজের ভুল ত্রটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য।

সভায় বিশেষ অতিথির ভাষণে ইউএনএইচসিআর-এর ওপারেশন প্রধান এলিজাবেথ বলেন, ইউএনএইচসিআর বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করে থাকে এবং যারা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানাতে এগিয়ে এসেছেন তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে কোস্ট ও সিসিএনএফকে বিশ্ব শরণার্থী দিবস স্মরণে কক্সবাজারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠোনের আয়োজন করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় সংস্থাসমূহ রোহিঙ্গাদের সর্বপ্রথম সহায়তাকারী, তাই তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ইউএন সংস্থাসমূহ এবং ইউএনএইচসিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউএনএইচসিআর-এর ওপারেশন প্রধান এলিজাবেথ বলেন, স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংক ইতোমধ্যে বরাদ্দ করেছে, শীঘ্রই তার কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, আগামী ২০১৯ সালে টঘঐঈজ ঈধষষ ভড়ৎ রহঃবৎবংঃ আহবান করবে এবং তাতে স্থানীয় সংস্থাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সভাপতির ভাষণে আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দেই, কারণ অনেক বছর পর বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ইউএনএইচসিআর-এর সাথে চুক্তি করেছে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলেছে। তিনি বলেন, সিসিএনএফ গত বছর প্রথমে স্থানীয় পরিবেশের ও স্থানীয় জনগণের ক্ষতির বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করে।

সভায় আরো যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন: ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম, সদস্য-কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী-সম্পাদক-দৈনিক বাঁকখালী, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, সাবেক সুপারিন্টেন্ডেন্ট-পিটিআই; নাসিরুদ্দিন, সহসভাপতি-কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, অশোক সরকার-প্রতিনিধি মুক্তি, ইকরাম চৌধুরী টিপু-এনটিভি প্রতিনিধি, এরশাদউল্লাহ-সাংবাদিক-দৈনিক জনকন্ঠ, অজিত নন্দী-প্রতিনিধি, ব্রাক; আবদুল আলীম নোবেল, সমন্বয়ক-পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন; ইলিয়াচ মিয়া-পরিচালক, কক্সবাজার পরিবেশ, মানবাধিকার ও উন্নয়ন ফোরাম।
Photos

News Paper

Social Sharing

Leave A Reply